রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫

ইতিহাসের সাক্ষী: নারী সমকামী সম্পর্কের ছবি 'ফায়ার'

১৯৯৮ সালের নভেম্বর মাসে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল সেদেশের সিনেমার ইতিহাসে প্রথম সমকামী সম্পর্ক নিয়ে তৈরি ছবি - 'ফায়ার' ।
ছবিটি মুম্বাইয়ের চলচ্চিত্র জগতে শুধু আলোড়নই সৃষ্টি করে নি- ছবিটিকে রীতিমত কলঙ্কজনক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল ।
দীপা মেহেতা পরিচালিত ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন বিশিষ্ট তারকা শাবানা আজমি।
ভারতীয় সিনেমায় তখন জনপ্রিয়তা ও খ্যাতির তুঙ্গে শাবানা আজমী। যখন তিনি ফায়ার ছবিটিতে অভিনয় করছেন তখন ভারতীয় চলচ্চিত্রে তিনি বিশ বছরের বেশি সময় পার করে দিয়েছেন। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসাবে চার চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন।
তবে অভিনয়ের বাইরে নারী অধিকারের একজন প্রবক্তা হিসাবে তখন তিনি কাজ করছিলেন এক বস্তিতে মুসলমান মহিলাদের নিয়ে। তাই ছবিটিতে সমকামী নারীর ভূমিকায় তিনি অভিনয় করবেন কীনা সে ব্যাপারে মনস্থির করতে তিনি কিছুটা সময় নিয়েছিলেন।
সেসময় ভারতীয় সমাজে সমকামিতা নিয়ে কেউ মুখ খুলত না। তিনি ভাবছিলেন ওই ছবিতে কাজ করলে তার সমাজকল্যাণমূলক কাজের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কীনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাহিনিটাই তাকে টানল। তার মনে হল কাহিনিটা খুবই জোরালো এবং এটা বলা দরকার।
শাবানা আজমির মনে হয়েছিল 'ফায়ার' শুধু দুই নারীর সম্পর্কের কাহিনি নয় – 'ফায়ার' ভারতীয় সমাজে মহিলাদের দাবিয়ে রাখার – বিশেষ করে ভারতে মধ্যবিত্ত যৌথ পরিবার কাঠামোয় বিবাহিত মেয়েদের অবহেলা আর বঞ্চনার কাহিনি।
বিবিসির সঙ্গে এই ছবি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন ভারতের সমাজে বহু সমকামী নারী, যারা পুরোপুরি উপেক্ষিত- এই ছবি মুক্তি পাবার পর তাদের অনুভূতি সম্পর্কে মানুষ নতুন করে ভাবতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে- ওই নারীরাও এই ছবিতে তাদের কন্ঠ খুঁজে পেয়েছে।
কিন্তু ছবিটিতে অন্তরঙ্গ মূহুর্তের দৃশ্যগ্রহণ করতে হয়েছে অনেক সন্তর্পণে।
মুক্তি পাবার পর ছবিটি নিয়ে উঠেছিল নিন্দার ঝড়। প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল নানা মহল।
কট্টর দক্ষিণপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন শিবসেনা একে হিন্দুত্ব বিরোধী ও ভারতীয় সংস্কৃতির বিরোধী বলে সহিংস বিক্ষোভ করেছিল।
কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা বিতর্ক ও সংসদে ছবিটি নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনার পর ছবিটি সিনেমা হলগুলো থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। পুর্নমূল্যায়নের জন্য ছবিটি পাঠানো হয়েছিল ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ডে।
পুর্নবিবেচনার পর ছবিটি আবার দেখানোর জন্য অনুমতি পায় কোনরকম কাটছাঁট ছাড়াই।
শাবানা আজমির কথায় সেটা ছিল ছবিটির জন্য বিরাট বিজয়।
ইতিহাসের সাক্ষীর এই পর্ব পরিবেশন করেছেন মানসী বড়ুয়া।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন