ভারতের একটি আদালত তার রায়ে বলেছে যে কিছু মুসলমান একাধিক বিয়ে করার জন্য কোরানের অপব্যাখ্যা করছেন।
গুজরাত হাইকোর্টের বিচারপতির মন্তব্য একজন স্ত্রীর বর্তমানে অন্য একজনকে বিয়ে করা ভারতীয় সংবিধান বিরোধী। ভারতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা উচিত বলেও মন্তব্য গুজরাত হাইকোর্টের।একটি পারিবারিক মামলার রায় দিতে গিয়ে গুজরাত হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালা বলেছেন মুসলমান পুরুষেরা একাধিক বিয়ে করার জন্য কোরানের ভুল ব্যাখ্যা করছেন। বহুবিবাহের যে সংস্থান কোরানে রয়েছে, তাকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
গুজরাতের এক বাসিন্দা জাফর আব্বাস মার্চেন্টের দায়ের করা আবেদনের রায় দিতে গিয়েই বিচারপতি এই রায় দিয়েছেন।
ওই ব্যক্তির স্ত্রী ভারতীয় দন্ডবিধি অনুযায়ী পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন যে বে আইনী ভাবে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন মি. মার্চেন্ট।
সেই অভিযোগ খারিজের আবেদনে মি. মার্চেন্ট আদালতকে বলেছিলেন মুসলিম ব্যক্তিগত আইন অনুযায়ী তাঁর চারটি পর্যন্ত বিয়ে করার সুযোগ রয়েছে।
ভারতের মুসলমানদের মধ্যে এই রায় নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
দেওবন্ধের দারুল উলুম ঘনিষ্ঠ মৌলানা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর কথায়, “কোরানের অনেক ব্যাখ্যা চালু আছে। কিন্তু যে ব্যাখ্যাটা সর্বজনগ্রাহ্য, তা অনুযায়ী মুসলমানেরা চারটি পর্যন্ত বিবাহ করতে পারেন। তবে প্রত্যেক স্ত্রীকে সমমর্যাদা দিতে হবে, প্রত্যেকের দিকে একইভাবে খেয়াল রাখতে হবে।“
গুজরাত হাইকোর্ট অবশ্য আরও বলেছে যে কোরানে বহুবিবাহের কথা একবার উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু সেটা শর্তসাপেক্ষে করা যেতে পারে। আর যে যুগে বহুবিবাহের কথা বলা হয়েছে, সেই সময়ের হয়তো উপযোগী ছিল, কিন্তু বর্তমান সময়ে সেটার সুযোগ নিচ্ছেন কিছু মুসলমান পুরুষ।
মুসলমান নারীদের সংগঠন ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলনের নেত্রী নূরজেহান সাফিয়া নিয়াজও মনে করেন যে অপব্যাখ্যা হচ্ছে কোরানের।
মিজ. নিয়াজের কথায়, “সত্যিই কোরানের অপব্যাখ্যা করা হয় বহুবিবাহের জন্য। একই সঙ্গে কোরানের বেশ কিছু অংশকে উপেক্ষাও করেন পুরুষমানুষেরা – নিজেদের সুবিধার জন্য। কোরানে বলা হয়েছে একাধিক বিয়ে করে যদি সব স্ত্রীকে সমানভাবে দেখভাল না করা যায়, তাহলে একাধিক বিয়ে যেন কেউ না করেন।"
সেই যুগের জন্য হয়তো বহুবিবাহ প্রয়োজনীয় ছিল – যুদ্ধের কারনে অনাথ হয়ে যাওয়া বা স্বামী হারা নারীদের সাহায্যের জন্যই ওই প্রথার কথা কুরানে বলা হয়েছে, কিন্তু এইসব ব্যাখ্যাগুলো তুলে ধরা হয় না, যে কেউ নিজেদের সুবিধা মতো ব্যাখ্যা করে নেন কোরানকে, মন্তব্য ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলনের নেত্রী নূরজেহান সাফিয়া নিয়াজের।
বিচারপতি পার্দিওয়ালা তাঁর রায়ে লিখেছেন বহুবিবাহ এবং একতরফা তালাক ভারতীয় সংবিধান বিরোধী।
মুসলমান নারীদের এই বৈষম্য দূর করার জন্য রাষ্ট্রের উচিত মুসলমান ব্যক্তিগত আইনের বদলে অভিন্ন দেওয়ানী বিধি চালু করা।
এই অতি স্পর্শকাতর বিষয়টি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো আগে ব্যপকভাবে প্রচার করলেও এই রায়ের প্রেক্ষিতে তা নিয়ে ফের বিতর্ক শুরু হয়েছে।
মৌলানা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলছেন, “অভিন্ন দেওয়ানী বিধি চালুর কথা বলার অর্থ আগুন নিয়ে খেলা করা।“
মুসলমান নারীদের সংগঠনগুলিও চায় না ভারতে অভিন্ন দেওয়ানী বিধি চালু হোক।
ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন বলছে সব ধর্মের মানুষদের মতোই মুসলমানদেরও তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী চলার স্বাধীনতা রয়েছে।
কিন্তু মুসলমান মহিলার চান তাঁদের পারিবারিক আইনকে লিখিত ও বিধিবদ্ধ করা হোক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন