রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৫

বাংলাদেশের কাছে জিম্বাবুয়ের শোচনীয় পরাজয়




জয়ের তিন নায়ক। আজ ম্যাচ শেষে। ছবি: শামসুল হক
 








পাকিস্তান পাত্তা পায়নি। ভারত নয়। এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকাও। শুধু এই তিন বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে বলেই নয়; বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছে দাপটের সঙ্গেই। প্রস্তুতি ম্যাচে জিম্বাবুয়ের চোখ রাঙানি ছিল বটে, তবে আসল লড়াইয়ে পাত্তা পেল না এলটন চিগুম্বুরার দলও। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ১৪৫ রানের বড় ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ।
 
বাংলাদেশ যত বড় ব্যবধানে জিতেছে, তত রান বোর্ডে জমাতেই পারেনি জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের ২৭৩ রানের জবাবে ৩৬.১ ওভারে ১২৮ রানে অলআউট জিম্বাবুয়ে। দুর্দান্ত বোলিং করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন সাকিব। তবে ‘দুর্দান্ত’ বোলিংটা সাকিব একা নন, করেছে সবাই। অধিনায়ক মাশরাফি নিজে যেমন ৬ ওভার বোলিং করে মাত্র ১৩ রানে নিলেন ২ উইকেট। একটি করে উইকেট আল-আমিন ও নাসির হোসেনের।
 
যে দুজন বোলিং শুরু করেছিল, উইকেট পাননি তাঁরাই। কিন্তু তাঁদের অবদানও কি খুব কম? ৭ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়েছেন আরাফাত সানি। মুস্তাফিজুর রহমান ৬ ওভারে দিয়েছেন ২৭। এই দুজন শুরুতেই রাশটা চেপে ধরেছিলেন। বাকিরাও নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছে। এ কারণে পাঁচ উইকেট নিয়ে ম্যাচ শেষে সাকিব বলতে পারলেন, ‘আমি আসলে খুব লাকি।’
 
খেলার ফলাফল নিয়ে আগ্রহটি মিইয়ে গিয়েছিল আগেই। তবু ৩৬তম ওভারের শুরুটা একটু আগ্রহ সৃষ্টি করল। নিজের বোলিং কোটার শেষ ওভার করতে এলেন সাকিব। এর আগেই নামের পাশে ৪টি উইকেট। পঞ্চম উইকেটটি এল শেষ নিজের ওভারের ওভারের পঞ্চম বলে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটালেন সাকিব। অথচ টেস্টে ৫ উইকেট নিয়েছেন ১৪ বার!
 
অস্ট্রেলিয়া সফর বাতিল করার পর তড়িঘড়ি করে আয়োজন করা হয়েছিল এই সিরিজের। কিন্তু সিরিজের শুরুতেই বোঝা গেল, অসম এক লড়াই হয়তো হতে যাচ্ছে।
 
দিনের শুরুতে মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরি আর তামিম ইকবাল ও সাব্বির রহমানের কার্যকরী দুই ইনিংসের ওপর ভর করে ২৭৩ রান তোলে বাংলাদেশ। দলনেতা মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রাথমিক লক্ষ্যই ছিল ২৭০-২৮০ এর ঘরে। খারাপ সংগ্রহ নয় মোটেও কিন্তু কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচে ২৭৮ রান তুলে ম্যাচ জিতেছিল জিম্বাবুয়ে। তাই কিছুটা দুশ্চিন্তা ছিলই। সেই শঙ্কা দূর করতে বে​শি সময় নেয়নি বাংলাদেশ।
 
জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের পুরোটা সময় অস্বস্তিতে রেখেও উইকেটের দেখা পাচ্ছিলেন না। এ জন্য মাত্র অষ্টম ওভারেই বোলিংয়ে নিয়ে আসা হয় সাকিবকে। দলনেতার এমন আস্থার প্রতিদান দিতে দেরি করেননি সাকিব। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই চামু চিবাবাকে আউট করে শুরু করেছেন। সাত ওভারের স্পেলটি যখন থামল, ততক্ষণে শেষ জিম্বাবুয়ের ম্যাচে ফেরার আশা। সাত ওভারের ওই স্পেলে মাত্র ২৪ রানে তিন উইকেট পেয়েছিলেন সাকিব। এর মাঝে প্রায় এক বছর পড়ে দলে ফেরা আল-আমিন হোসেনও ফিরিয়ে দেন লুক জঙ্গুয়েকে। মাত্র ৯ ওভারের মধ্যেই বিনা উইকেটে ৪০ রান থেকে ৬৫ রানেই ৪ উইকেটে হারিয়ে বসে সফরকারীরা।
 
অধিনায়ক মাশরাফি প্রথমে বল হাতে নেন ২২তম ওভারে। বল হাতে নেওয়ার পর অবশ্য সময় খুব একটা নেননি মাশরাফি। নিজের তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই সিকান্দার রাজাকে আউট করে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে ২০০তম উইকেটটিও পেয়ে গেছেন মাশরাফি। একটু পরেই ম্যালকম ওয়ালারকেও ফিরিয়ে দিয়ে জিম্বাবুয়েকে খাদের কিনারায় নিয়ে গেছেন তিনিই।
 
এর পরই যা একটু প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছেন এলটন চিগুম্বুরা। গ্রায়েম ক্রেমারকে নিয়ে ৩৩ রানের জুটি গড়ে দলকে ১০০ পার করেছেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। এই জুটি ভাঙার দায়িত্বটাও নিজের কাঁধে নিয়েছেন সাকিব। ক্রেমার এবং পানিয়াঙ্গারাকে পরপর দুই ওভারে আউট করে ক্যারিয়ারের প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট পান তিনি। পরের ওভারের প্রথম বলেই নাসির হোসেনের বলে আউট হয়ে যান চিগুম্বুরা। একতরফা ম্যাচটির সমাপ্তি ঘটে জিম্বাবুয়ের অধিনায়কের উইকেটের পতনের পর পরই। ফিল্ডিংয়ের সময় পাওয়া চোটের কারণে ব্যাট করতে নামেননি রিচমন্ড মুতুম্বামি। তাই প্রায় ১৪ ওভার বাকি থাকতেই বাংলাদেশ ১৪৫ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতে যায় সিরিজের প্রথম ম্যাচ।
 
রানের ব্যবধানে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের ছিল এটাই সবচেয়ে বড় জয়। আরও একবার প্রমাণিত হলো, এক সময়ের অগ্রজ থেকে সমশক্তি, তার পর আরও পিছিয়ে জিম্বাবুয়ে এখন বাংলাদেশের তুলনায় খর্ব শক্তিরই। বাংলাদেশ তো ভারত-পাকিস্তান-প্রোটিয়াদের বধ করে আরও ওপরে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। বারবার দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ানো অতিথিদের সম্মান জানানোর কমতি অতিথি পরায়ণ বাংলাদেশ কখনোই করবে না। তবে একপেশে লড়াই দেখাও ক্লান্তিকর, ​হোক না জয়ী দলটা নিজেরই দল।
 
অবশ্য জিম্বাবুয়ে দাবি করতে পারে, ‘আমরা না হয় এখনো ছোট। কিন্তু একপেশে জয়ের এই ক্লান্তির দায় কি বাকি তিন বড়রও নয়?’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন