বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

নেপালে সংবিধান বিরোধী বিক্ষোভে বিপর্যস্ত জীবন

                      কয়েক সপ্তাহ ধরেই নেপালে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে                

নেপালের দক্ষিণাঞ্চলে ভারত সীমান্তের প্রধান বন্দর এলাকায় বিক্ষোভের কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর, নেপালে অনেক নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট দেখা দিয়েছে।
নেপালের নতুন সংবিধানের বিরোধিতা করে ওই এলাকার একটি জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা অবরোধ শুরু করেছে। ফলে ভারত থেকে তেল আর অন্যান্য জরুরী সরবরাহ নিয়ে আসা যানবাহন সীমান্ত বন্দরেই আটকা পড়েছে।
ফলে নেপালের অনেক এলাকায় এর মধ্যেই খাবার আর তেলের মতো দরকারি জিনিসের রেশনিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে।
সীমান্ত এলাকা ঘুরে এসে বিবিসির সঞ্জয় মজুমদার জানাচ্ছেন, একদিকে সড়কে যেমন অনেক মানুষ অবস্থান নিয়ে রয়েছে, তেমনি বিক্ষোভ মোকাবেলায় রণসজ্জায় প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশও। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই নেপালে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
                 বিক্ষোভের ফলে নেপালে খাবার আর তেলের মতো দরকারি জিনিসের রেশনিং শুরু হয়েছে
ভারত সীমান্তবর্তী সমতল ভূমিতে বসবাসকারী বাসিন্দারা দেশটির নতুন সংবিধানের বিরোধিতা করছে, কারণ তাদের মতে এটি ন্যায়সঙ্গত হয়নি। কারণ, তারা মনে করে, সংবিধানে যেভাবে নতুন প্রাদেশিক ভাগ করা হয়েছে, তা তাদের সংসদে ন্যায্য অধিকার দেবে না।
অনিল কুমার ঝাঁ, একজন বিক্ষোভকারী বলছেন, পঞ্চাশ শতাংশের বেশি জনসংখ্যা হিসাবে সংসদে আমাদের সেরকমই প্রতিনিধি থাকা উচিত। কিন্তু যেভাবে নতুন সংবিধান লেখা হয়েছে, তাতে আমাদের ত্রিশ শতাংশেরও কম প্রতিনিধি থাকবে।
দুইশ চল্লিশ বছর পুরনো রাজতন্ত্র উচ্ছেদের প্রায় সাতবছর পর নেপাল তার নতুন সংবিধান গ্রহণ করেছে, যা দেশটির একটি মাইল ফলক হিসাবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। ফেডারেল সরকারের আদলে, আর হিন্দু রাষ্ট্র থেকে বেরিয়ে সেই সংবিধানটি গত সপ্তাহে পাস হয়েছে। কিন্তু সেটি যেন দেশটিতে নতুন করে সংকট তৈরি করেছে।
                 অবরোধে সীমান্ত এলাকায় আটকে পড়েছে অনেক মালবাহী ট্রাক                
নেপালের একটি রাজনৈতিক দলের নেতা কে পি ওলি, যিনি নতুন প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, বলছেন, আমাদের দেশে একশ পঁচিশটি গোত্র রয়েছে।আর একশ তেইশটি পৃথক ভাষার জাতি রয়েছে। তাই শুধুমাত্র জাতির পরিচয়ে আমার তো নেপালে একশ পঁচিশটি প্রদেশে ভাগ করতে পারবো না। তবে সবার জাতি পরিচয়ই আমাদের সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে।
নেপালের এই বিক্ষোভের জন্য অনেকে প্রতিবেশী ভারতকেও দায়ী করেছে। অনেকেই বলছেন, ভারত নেপালে তাদের প্রভাব বিস্তার করতেই প্রকাশ্যেই নতুন সংবিধানের সমালোচনা করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও, ‘ভারত তুমি চলে যায়’, হ্যাশ ট্যাগ দিয়ে মন্তব্য করা হচ্ছে।
নেপালের একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কনক মুনি দীক্ষিত বলছেন, ভারতের গায়ে পড়া উস্কানি আর অনানুষ্ঠানিক অবরোধ, নেপালের এই বিক্ষোভে আরো উস্কানি যোগাচ্ছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে ভারত তাদের নিজেদের ইতিহাসের সম্মান করছে না, তাদের অবশ্যই এমন আচরণ বন্ধ করা উচিত।
এই বিক্ষোভে উস্কানি দেয়ার জন্য নেপালে অনেকেই ভারতকে দায়ী করেছেন                
ভারত সীমান্তবর্তী এই উত্তেজনার প্রভাব পড়েছে পুরো নেপাল জুড়ে। কারণ এই এলাকাটি নেপালের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানকার সমতলেই নেপালের সবচেয়ে বেশি চাল আর চিনির মতো ফসল ফলে। আর এই সড়ক দিয়েই ভারত থেকে নেপালের দরকারি সব পণ্য দেশের অন্যান্য অংশে যায়।
এ কারণে এই এলাকার বিক্ষোভে রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক, দুইদিকেই নেপালে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
BBC BAGLA

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন