শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

বোমা-হামলায় কারাভোগের পর নায়কোচিত মুক্তি সঞ্জয় দত্তের

sanjay_duttImage copyrightAP
Image captionসাংবাদিকদের সঞ্জয় অনুরোধ করেন, তাকে যেন মুম্বাই বিস্ফোরণের আসামি না বলা হয়
১৯৯৩ সালে মুম্বাইতে সিরিজ বোমা-হামলার সঙ্গে জড়িত একটি মামলায় দীর্ঘ কারাদন্ড ভোগ করার পর বলিউড তারকা সঞ্জয় দত্ত আজ সকালে পুনের ইয়েরওয়াডা জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
বিকেলে মুম্বাইতে নিজের বাসভবনে এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি দাবি করেছেন, তিনি কখনওই একজন সন্ত্রাসবাদী নন।
বলিউডের বহু পরিচালক ও সঞ্জয়ের সহ-অভিনেতারা প্রায় সবাই একবাক্যে তার মুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন, মুম্বাইয়ে তাকে আজ দেখতে জনতার ভিড়ও উপছে পড়েছে।
কিন্তু ভারতের বুকে সবচেয়ে বিধ্বংসী জঙ্গী হামলার সঙ্গে যার নাম জড়িয়ে আছে, তিনি জেল থেকে বেরোনোর পর কীভাবে এই বিপুল অভ্যর্থনা পাচ্ছেন?
sanjay_dutt
Image captionশহরের বিভিন্ন জায়গায় সঞ্জয়ের মুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে এমন ব্যানার টাঙ্গানো হয়
আজ সকালে পুনের ইয়েরওয়াডা জেল থেকে বাইরে বেরিয়েই যেভাবে সঞ্জয় দত্ত মাটিতে হাত ছুঁইয়ে প্রণাম করেন ও তারপর দেশের জাতীয় পতাকাকে কুর্নিশ জানান, তেমন আবেগঘন দৃশ্য বলিউডেও খুব বেশি দেখা যায় না।
তারপর মিডিয়ার তুমুল দৌড়োদৌড়ি ও তাকে এক ঝলক দেখার জন্য সমর্থকদের হুড়োহুড়ির মধ্যেই তিনি ঘোষণা করেন – গত তেইশ বছর ধরে তিনি যে মুক্তির আশায় অপেক্ষা করে ছিলেন – আজ অবশেষে সেই মুক্তির দিন এসে গেছে।
তাকে জেল-গেটে নিতে এসেছিলেন স্ত্রী মান্যতা ও যমজ ছেলেমেয়ে – সঙ্গে ছিলেন সঞ্জয় দত্তের বিখ্যাত মুন্নাভাই সিরিজের ছবিগুলোর পরিচালক রাজকুমার হিরানি।
হিরানি বলেন, আজ তার জন্য ভীষণ এক খুশির দিন – সঞ্জয়ের সঙ্গে আরও লম্বা ইনিংস খেলার জন্য তিনি মুখিয়ে আছেন।
sanjay_duttImage copyrightReuters
Image captionমিডিয়ার তুমুল দৌড়োদৌড়ি এবং সমর্থকদের হুড়োহুড়ির মধ্যে জেল থেকে বেরিয়ে আসেন সঞ্জয়
সঞ্জয়ের খলনায়ক বা বিধাতা-র মতো ছবির পরিচালক সুভাষ ঘাইও প্রায় এক সুরে বলেছেন, কারাবাসের দিনগুলো সঞ্জয় দত্তকে আগুনে পুড়িয়ে শুদ্ধ করে তুলবে।
মি ঘাইয়ের কথায়, ‘আজ সারা দেশ কেন এত খুশি সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। কারণ সবাই জানে সঞ্জয় ভীষণ ভাল মানুষ, দারুণ এক অভিনেতা। বন্ধুর জন্য, পরিবারের জন্য সব সময় ঝাঁপিয়ে পড়ে।’
চার্টার্ড প্লেনে পুনে থেকে মুম্বাই এসেই সঞ্জয় মা নার্গিস দত্তের কবরে মাথা ঠেকাতে যান, তারপর যান শহরের বিখ্যাত সিদ্ধিবিনায়ক মন্দির দর্শনে।
সর্বত্রই তাকে দেখতে মানুষের ভিড় উপচে পড়ে।
বিকেলে নিজের বাড়িতে বসে তিনি সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন – তাকে যেন মুম্বাই বিস্ফোরণের আসামি না-বলা হয়।
সঞ্জয় বলেন, ‘আপনাদের একটাই ছোট্ট অনুরোধ – আমি কিন্তু সন্ত্রাসবাদী নই। টাডা আইনে আমার বিরুদ্ধে যতগুলো সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়েছিল তার সবগুলো থেকে আদালত কিন্তু আমায় অব্যাহতি দিয়েছে। আমি সাজা খেটেছি শুধু অস্ত্র আইনে – কাজেই দয়া করে মুম্বাই ব্লাস্টের সঙ্গে আমার নামটা জড়াবেন না।’
সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তা হল মুম্বাই বিস্ফোরণে জড়িত জঙ্গীরাই তাকে একে-৫৬ রাইফেল ও পিস্তল জোগান দিয়েছিল।
কিন্তু যে ভারত এখন দেশদ্রোহ-বিতর্ক নিয়ে সরগরম বা আফজল গুরুর সমর্থকদের নিন্দায় সরব – সেখানে এই সঞ্জয় দত কীভাবে জেল থেকে বেরিয়ে এই নায়কোচিত সংবর্ধনা পাচ্ছেন?
সমাজতত্ববিদ আশিস নন্দী বলছিলেন, ‘এখানে সঞ্জয়ের সমর্থক ও বিরোধী দুরকম শিবিরই আছে। একদল তার মুক্তি নিয়ে মাতামাতি করলেও অন্যরা কিন্তু বলছে ও ভাল করে জেলই তো খাটেনি! আর দুপক্ষই দেখানোর চেষ্টা করছে অন্য পক্ষ সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থক’।
অর্থাৎ একদল ভক্ত যেমন তাকে মাথায় করে রাখছেন, তেমনি মোট পাঁচ বছরের জেলের সাজার মধ্যেও তিনি বারবার যেভাবে পেরোলে বেরোনোর সুযোগ পেয়েছেন বা সাড়ে তিন মাস আগেই ছাড়া পেয়ে গেছেন অনেকে তারও সমালোচনা করছেন।
দ্বিতীয় এই দল বলছে, বলিউডে সঞ্জয় দত্-এর তারকার মর্যাদাই হয়তো তাকে সাহায্য করেছে।
আশিস নন্দী বলছিলেন সিনেমার জগতের অনেকেরই বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে ধারণা খুব কম।
কাজেই সঞ্জয় দত্তও হয়তো না-বুঝে মূর্খের মতো ওই সব অস্ত্রশস্ত্র রেখেছিলেন সেটাও হতে পারে এবং অনেক মানুষ সেটা বিশ্বাসও করেন।
এই মুহুর্তে তার প্রতি সহানুভূতিশীলদেরই যে পাল্লাভারী সেটা বুঝতে অবশ্য কোনও অসুবিধা হচ্ছে না – আর এই সমর্থন আর সহানুভূতিতে ভর করেই সঞ্জয় দত্ খুব শিগগিরি ফিরে আসছেন মুন্নাভাই-থ্রি ও আরও নতুন সব ছবির শ্যুটিংয়ে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন