শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

বিদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার সিদ্ধান্তে মালয়েশিয়ার ইউ-টার্ন

Image copyrightAFP
Image captionবাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিককে মালয়েশিয়া নেওয়া হবে বলে বৃহস্পতিবারই দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছিল।
মালয়েশিয়া সরকার বিদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি বলেছেন, মালয়েশিয়ার কতো বিদেশি শ্রমিক প্রয়োজন সেবিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত বিদেশি শ্রমিক নেওয়া স্থগিত থাকবে।
বাংলাদেশ থেকে আগামী পাঁচ বছরে ১৫ লাখ শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে দুটো দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই মালয়েশিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হলো।
মালয়েশিয়ায় ন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা বলছেন, বিদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ায় অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগে সমালোচনার মুখেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক নেয়ার জন্য মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী দু’দিন ঢাকা সফর করেছেন।
Image copyrightAFP
Image captionমালয়েশিয়ায় এখন প্রায় সাড়ে ২১ লাখ বিদেশি শ্রমিক বৈধভাবে কাজ করছে আর অবৈধভাবে রয়েছে ৪০/৫০ লাখের মতো বিদেশি শ্রমিক
ঢাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।
কিন্তু পরদিনই মালয়েশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি বিদেশি কর্মী নেয়া স্থগিত করার ঘোষণা দেন। তার এই ঘোষণা দেশটির গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।
মালয়েশিয়ার শ্রমিকদের জাতীয় ফোরাম ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সেক্রেটারি জেনারেল গোপা ক্রিসম্যান জানিয়েছেন, তাদের দেশের উপ প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্পে বৈঠকের পর বিদেশি শ্রমিক নেয়া স্থগিতের ঘোষণা দেন।
তিনি আরও জানিয়েছেন, “বিদেশী শ্রমিক নেয়া স্থগিত করার কারণ হিসেবে মালয়েশিয়া সরকার বলেছে, কতো শ্রমিক প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের পর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবে। সেই সময় পর্যন্ত বিদেশি কর্মী নেয়া স্থগিত থাকবে।”
অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে মালয়েশিয়ায় কাজ করে কারাম নামে একটি সংগঠন। এর সমন্বয়কারী হারুন আল রশিদ বলছিলেন, বিদেশী শ্রমিক নেয়ার ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ায় দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ এখন সামনে আসছে। এসব অভিযোগ নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে বিদেশি শ্রমিক নেয়া স্থগিত করা হলো।
Image copyrightAFP
Image captionবাংলাদেশসহ জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশগুলো থেকে কর্মী আনার ব্যবসা মালয়েশিয়ায় লোভনীয় ব্যবসায় পরিণত হয়েছে বলছে মালয়েশিয়ার ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস।
মালয়েশিয়ার ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের নেতা গোপা ক্রিসম্যান জানিয়েছেন, তাদের দেশে এখন প্রায় সাড়ে ২১ লাখ বিদেশি শ্রমিক বৈধভাবে কাজ করছে আর অবৈধভাবে রয়েছে ৪০/৫০ লাখের মতো বিদেশি শ্রমিক।
গোপা ক্রিসম্যান উল্লেখ করেছেন, অবৈধভাবে থাকা শ্রমিকদের বেতন কম দেয়াসহ নানাভাবে প্রতারণা করা হচ্ছে। এই শ্রমিকদের বৈধভাবে কাজের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য তারা সরকারের সাথে আলোচনা করছিলেন।
মালয়েশিয়ার এই ট্রেড ইউনিয়ন নেতা আরও বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মুখেই সরকার শ্রমিক আনা স্থগিত করেছে।
“বাংলাদেশসহ জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশগুলো থেকে কর্মী আনার ব্যবসা এখানে লোভনীয় ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এই ব্যবসায় একটা গোষ্ঠী রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে। এরসাথে মালয়েশিয়া সরকারের কারও কারও জড়িত থাকার অভিযোগ উঠছে।এই অভিযোগ নিয়ে আমাদের প্রতিবাদের মুখে সরকার এখন বিদেশি কর্মী নেয়া স্থগিত করলো।”
এদিকে, বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৫ লাখ শ্রমিক নেয়ার সমঝোতার পরদিনই মালয়েশিয়ার ভিন্ন ঘোষণায় বাংলাদেশ অবাক হয়েছে।
বিষয়টাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত জানার পরই বাংলাদেশ বক্তব্য দেবে। তবে বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার সাথে আলোচনা অব্যাহত রাখবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন