বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) কর্তৃপক্ষ জানায়, গতকাল তাদের ২১টি গ্রাহক হিসাব থেকে অন্য কেউ টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে তারা দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করে। তারা নিজেদের এটিএম কার্ড সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। তবে সাইবার সন্ত্রাস, নাকি প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে এই টাকা উধাওয়ের ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ভুক্তভোগী একজন গ্রাহক অনলাইন পত্রিকা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সহকারী সম্পাদক মাহাবুবা আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইবিএল থেকে তিনি ব্যাংকিং সেবা নিয়ে থাকেন। সাধারণত ব্যাংক থেকে টাকা তুললে তিনি মুঠোফোনে খুদে বার্তা পান। গতকাল সকালে ঘুম থেকে উঠেই তিনি মুঠোফোনে এ রকম দুটি খুদে বার্তা পেয়েছেন, যাতে বলা হয় রোকেয়া সরণিতে অন্য একটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে দুবারে ৪০ হাজার করে ৮০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে। কিন্তু তাঁর এটিএম কার্ডটি বাসাতেই তাঁর কাছে আছে। তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন হয়তো খুদে বার্তাটি ভুলভাবে এসেছে। এরপর ব্যাংক হিসাব পরীক্ষা করে দেখেন সত্যিই ৮০ হাজার টাকা কম। এরপর তিনি ইবিএলের গ্রাহকসেবা বিভাগে অভিযোগ করেন। তখন তাঁকে জানানো হয়, এ রকম ঘটনা আরও কয়েকজনের সঙ্গেই ঘটেছে। গ্রাহকসেবা বিভাগের পরামর্শে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কার্ডে লেনদেন বন্ধ করে দেন মাহাবুবা।
মাহাবুবা আরও বলেন, ইবিএল থেকে তিনি একসঙ্গে ২০ হাজারের বেশি টাকা তুলতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর হিসাব থেকে দুবারে ৮০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে গতকাল। এ বিষয়ে গ্রাহকসেবা বিভাগ তাঁকে বলেছে, ১ হাজার টাকার নোট হলে একবারে ৪০ হাজার টাকা ওঠানো সম্ভব।
যোগাযোগ করা হলে ইবিএলের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান জিয়াউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ২১ জন গ্রাহক তাঁদের হিসাব থেকে টাকা উধাও হওয়ার অভিযোগ করেছেন। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটা সাইবার আক্রমণ, না তাঁদের সিস্টেমের প্রযুক্তিগত সমস্যা—তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জিয়াউল করিম বলেন, অভিযোগগুলো পাওয়ার পরে প্রথমে টাকা উত্তোলনের পরিমাণ (উইথড্র লিমিট) কমিয়ে ২০ হাজার করা হয়। এরপরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে দুপুরের দিকে অনলাইনে লেনদেনের ব্যবস্থা ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচের (এনপিএস) লিঙ্কটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিজস্ব সিস্টেমও বন্ধ করে দেয় ইবিএল। এর ফলে এটিএম বুথগুলো থেকে গ্রাহকেরা আর টাকা তুলতে পারেননি। কয়েক ঘণ্টা এটিএম লেনদেন বন্ধ থাকার পরে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আবারও বুথগুলো চালু করা হয়। তিনি বলেন, যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ জানতে চাইলে জিয়াউল করিম বলেন, একেকটি হিসাব থেকে দিনে এক লাখের বেশি টাকা তোলা যায় না। যার ফলে সব মিলিয়ে খোয়া যাওয়া টাকার পরিমাণটা খুব বেশি হবে না। তিনি দাবি করেন, ইবিএলের বুথ থেকে এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে ইবিএলের কার্ডে ভিসা সুবিধা যুক্ত থাকায় অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথেও এই কার্ড ব্যবহার করা যায়। অন্য ব্যাংকের বুথ থেকেই জালিয়াতিটা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা প্রথম আলোকে বলেন, এটা সাইবার আক্রমণ, নাকি প্রযুক্তিগত সমস্যা—তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। তদন্ত করে এটা বের করার পরে গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করবে এবং সে অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেবে।
শুভঙ্কর সাহা বলেন, দেশে প্রায় ৯০ লাখ এটিএম কার্ডের গ্রাহক রয়েছেন। গতকাল কী কারণে একটি ব্যাংকের গ্রাহকদের এ সমস্যা হলো, তা দেখার বিষয়। যদি ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচে সমস্যা হয়, তাহলে কার কী দায়, তা নির্ধারণের বিষয় রয়েছে। আবার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সিস্টেমে কোনো সমস্যা হলে তাও বের করা যাবে। তবে ইবিএলকে অবশ্যই গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এটা সাইবার আক্রমণ, নাকি প্রযুক্তিগত সমস্যা—এ বিষয়ে শুভঙ্কর সাহা বলেন, না দেখে কিছুই বলে যাবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন