বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ভারতে চলে এসেছেন, ভারত তাদের পাকাপাকিভাবে সে দেশে থাকতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই হিন্দু-শিখ বা বৌদ্ধদের দীর্ঘমেয়াদি ভিসা দেওয়া হবে মানবিক কারণে – তবে শর্ত একটাই, ২০১৪র ৩১শে ডিসেম্বর বা তার আগে যারা ভারতে প্রবেশ করেছেন তারাই কেবল এই সুযোগ পাবেন।
যে বেশ কয়েক লক্ষ হিন্দু বা শিখ এর আওতায় পড়ছেন শরণার্থীদের প্রাপ্য সব সুযোগ-সুবিধাই তাদের মিলবে, তবে নাগরিকত্বর ব্যাপারে ভারত তাদের এখনই কোনও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে না।
ভারত সরকারের বক্তব্য, ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে বা নির্যাতনের ভয়ে লক্ষ লক্ষ সংখ্যালঘু মানুষ প্রতিবেশী বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
এই হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখ-জৈনরা কেউ কেউ ভিসা নিয়ে ভারতে ঢুকলেও ভিসা শেষ হওয়ার পরও আর দেশে ফেরেননি, অনেকেই আবার কোনও কাগজপত্র ছাড়া হয়তো স্রেফ দালালকে ধরে সীমান্ত পেরিয়েছেন।
এখন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, গত বছর পর্যন্ত যারা এভাবে ভারতে এসেছেন তাদের দীর্ঘমেয়াদি ভিসা দিয়ে ভারতেই থাকার সুযোগ করে দেওয়া হবে।
ক্ষমতাসীন দল বিজেপি-র পলিসি রিসার্চ গ্রুপের সদস্য ড: অনির্বাণ গাঙ্গুলি বলছিলেন এর মাধ্যমে বিজেপি তাদের পুরনো একটি প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করল।
তাঁর কথায়, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি নির্বাচনী প্রচারে বারবার বলেছেন সারা দুনিয়ার হিন্দুদের নির্যাতিত হলে যাওয়ার জায়গা একটাই – আর সেটা ভারত। ভারত সব ধর্মেরই, কিন্তু এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ভারত সারা বিশ্বের হিন্দুদের প্রতিই তাদের দায়িত্ব পালন করল।’
প্রকারান্তরে বিজেপি নেতৃত্ব এটাও বলতে চাইছেন যে বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের মুসলিমদের এর আওতায় রাখা হয়নি – কারণ তাদের যাওয়ার জন্য আরও নানা দেশই আছে।
সরকার আসলে এই নির্বাহী আদেশটি জারি করেছে ১৯২০-র পাসপোর্ট আইন ও ১৯৪৬র ফরেনার্স অ্যাক্টের আওতা থেকে ওই সংখ্যালঘুদের বাইরে রেখে – যদিও তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি।
বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য বহুদিন ধরে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা লড়ছে বিমলাংশু রায় ফাউন্ডেশন, তাদের আইনজীবী শুভদীপ রায় অবশ্য প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলছেন, ‘এই সিদ্ধান্তে আমাদের দাবি পুরোপুরি মিটছে না ঠিকই – তবে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার পরিচয় অন্তত মিলছে। পূর্ণ নাগরিকত্ব দিতে গেলে দেশের নাগরিকত্ব আইনে বদল আনতে হবে, কিন্তু পার্লামেন্টে যে অচলাবস্থা চলছে তাতে সেটা কবে সম্ভব হবে জানা নেই। আপাতত নির্বাহী আদেশে যেটুকু করা যায় সরকার সেটাই করেছে।’
ভারতের এই সিদ্ধান্তে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক প্রভাব পড়বে আসামে – যেখানে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ একটি প্রধান ইস্যু এবং যে রাজ্যে ভোট আর কয়েক মাসের মধ্যেই।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ইতিমধ্যেই সেখানে বিদেশি নাগরিকদের চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে ও অনেককেই ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক রাখা হয়েছে।
আসামে শিলচরের এমপি ও কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতা দেব মনে করছেন এই সরকারি নির্দেশনামা সেই সঙ্কটের কোনও সুরাহা করতে পারবে না।
তিনি বলছিলেন, ‘সম্প্রতি আমি শিলচরের বহু ক্যাম্পে গিয়ে দেখেছি বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরাও সেখানে দীর্ঘদিন ধরে আটক আছেন এবং তারা দেশে ফিরতে চান। কিন্তু দেশে ফেরাতে হলে তাদের ডিপোর্ট করা ছাড়া কোনও রাস্তা নেই, অথচ দুই দেশের মধ্যে কোনও ডিপোর্টেশন চুক্তি নেই। এই অসহায় মানুষগুলো শিবির থেকে মুক্তি পাবেন কি না তার কোনও জবাব কিন্তু নির্বাহী আদেশে নেই।’
সুস্মিতা দেব আরও বলছিলেন এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশী হিন্দুরা কেউ সান্ত্বনা পেলে তার বলার কিছু নেই, তবে এটা কোনও সর্বাত্মক সমাধান নয় – বরং তার মতে আসামের নির্বাচনের আগে ঝুলিয়ে দেওয়া একটা ‘ললিপপ’ মাত্র!
এই সিদ্ধান্ত বিজেপিকে আসামে কোনও নির্বাচনী ফায়দা দিক বা না-দিক, যে হিন্দু বা শিখরা দিনের পর দিন ভারতে অবৈধভাবে বাস করছিলেন তারা যে আপাতত স্বস্তি পাবেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
তবে সরকার একটা কাট-অফ তারিখ বেঁধে দিলেও এর পর নতুন করে বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে ভারতে সংখ্যালঘুদের আসার ঢল নামতে পারে, এমন একটা সম্ভাবনাও কিন্তু দিল্লি নাকচ করছে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন