শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৫

নানা শংকার মধ্যে ঢাকার একটি পরিবারের বড়দিন

 

   
                 বড়দিনের সাজে ক্রিস্টিনা মেথেলডা।
নিরাপত্তা নিয়ে নানা আশংকার মধ্যে বাংলাদেশের খ্রীষ্টান সম্প্রদায় এবারের বড়দিনের উৎসব উদযাপন করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে কয়েকজন খ্রীষ্টান ধর্মযাজককে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে আরও অনেককে। এ কারণে গির্জাগুলোতে বড়দিনের অনুষ্ঠানের জন্য নেয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা। এই পরিস্থিতিতে ঢাকার একটি সাধারণ খ্রীষ্টান পরিবার কিভাবে এবারের ক্রিসমাস উৎসব পালন করলেন, তা দেখতে গিয়েছিলেন বিবিসি বাংলার ফারহানা পারভিন:
খুব সকালেই ক্রিস্টিনা মেথেলডার বাসায় শুরু হয়ে গেছে বড়দিনের উৎসব। স্বামী আর দুই সন্তানকে নিয়ে তৈরি হচ্ছেন গীর্জায় যাওয়ার জন্য।
“আজকে সকালে যেহেতেু গির্জায় যাবো, তাই খুব ভোরে উঠেছি, ছয়টায়। সবার জন্য নাস্তা রেডি করলাম। ঘর-বাড়ী পরিস্কার করার কাজটা রাতেই করে রেখেছি।”
ঢাকার তেজগাঁও ক্যাথলিক চার্চে বড়দিনের আয়োজনে ছিল কড়া নিরাপত্তা
সকালে গির্জার প্রাথনায় ক্রিস্টিনার পরিবারের সঙ্গী হলাম আমিও। ঢাকার ফার্মগেটের মনিপুরি পাড়ার এই বাসা থেকে আমাদের গন্তব্য ছিল তেজগাও এর কাথলিক চ্যার্চ।
গির্জার মুখে ঢুকতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। সাদা পোশাকেও পাহারা দিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক সদস্য।
বাংলাদেশে খ্রীষ্টান সংখ্যালঘুদের জন্য এরকম নিরপত্তাহীন সময় আর আসেনি।
ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদী হামলার মধ্যে এখন খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ও হয়ে উঠেছে নতুন টার্গেট। কয়েকজন খ্রীষ্টান ধর্মযাজককে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে আরও অনেককে।
এসব ঘটনার ছায়া পড়েছে এবারের বড়দিনের উৎসবে।
বার্নাড এন্থনি গোমেজ নিজের এলাকাতে বড়দিনের উৎসবের আয়োজন করেন। তবে এবারে স্থানীয়রা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখানোয় সংক্ষিপ্ত ভাবে শেষ করেছেন সে আয়োজন।
                 বড়দিনের উৎসবে যোগ দিতে আসা শিশুরা
“আমরা প্রতিবার বড়দিনের উৎসব যখন করি, তখন সেখানে হিন্দু, মুসলিম, খ্রীষ্টান সবাই সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবার যখন অনুষ্ঠান করতে চেয়েছি, যে বাসার সামনের রাস্তায় অনুষ্ঠান করি তারা আপত্তি করলো। ওরা বললো, তোমরা যখন অনুষ্ঠান করে চলে যাবে, তখন কেউ যদি বোমা মারে, তখন কে দেখবে? এজন্যে এবার আমরা অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করেছি, একদিনেই শেষ করেছি।”
বাংলাদেশের সর্বশেষ আদম শুমারী অনুযায়ী খ্রীস্টান জনসংখ্যা পাঁচ লক্ষ।
তবে খ্রীস্টান ধর্মাবলস্বীরা বলছেন ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার লোকজনকে ধরে হিসেব করলে এই সংখ্যা দশ লক্ষ হতে পারে।
দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় ছোট এই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও মৃত্যুর হুমকিতে নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় এখন কেউ কেউ গোপন করছেন।
লিপি রোজারিও বলছিলেন গতকালের রাতের অনুষ্ঠানে নিতে নিরাপত্তার কারণেই বের হননি।
“কালকে রাতে চার্চে আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বাচ্চাদের নিয়ে আসতে ভয় পেয়েছি। যদি কিছু হয়ে যায়, তখন আমি কিভাবে এটা সামাল দেব?”
লিপি রোজারিও জানালেন, নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি নিজের ধর্মীয় পরিচয়ও অনেক সময় গোপন রাখেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন