সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১ অক্টোবর থেকে বাসের ভাড়া প্রতি কিলেমিটারে ১০ পয়সা বাড়িয়ে এক টাকা ৭০ পয়সা করা হয়। মিনিবাসের ভাড়াও ১০ পয়সা বেড়ে এক টাকা ৬০ পয়সা হয়েছে।
সে হিসেবে ১০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করলে বাসগুলোতে মাত্র এক টাকা বেশি ভাড়া নেওয়ার কথা। কিন্তু এই পরিমাণ দূরত্বে ঢাকার বিভিন্ন রুটের পরিবহনগুলোকে নতুন ভাড়া কার্যকরের অজুহাতে দুই টাকা থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেশি ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে।
এছাড়া ‘লোকাল’ বাসগুলো আগে যেখানে পাঁচ টাকা ভাড়া নিত এখন সেখানে ছয় টাকা নিচ্ছে। আবার আগের ৭/৮ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ১০ টাকা হারে।
গুলিস্তান থেকে চিড়িয়াখানাগামী বসুমতি ট্রান্সপোর্টে নতুন ভাড়ার তালিকা ঝোলানো দেখা যায়। আগের ২৩ টাকা থেকে ৫ টাকা বাড়িয়ে জন প্রতি ২৮ টাকা করে ভাড়া আদায় করছে কোম্পানিটি।
সুমন নামে বসুমতির কর্মী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘বিআরটিএর নিয়ম অনুযায়ী’ তারা ভাড়া আদায় করছেন। নতুন নিয়মে আগের চেয়ে পাঁচ টাকা ভাড়া বেড়েছে।
যদিও গুলিস্তান থেকে চিড়িয়াখানার দূরত্ব ১৬ কিলোমিটারের বেশি নয়; সে হিসেবে ভাড়ার বাড়ার কথা সর্বোচ্চ দুই টাকা।
গুলিস্তান থেকে আব্দুল্লাহপুরগামী বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিবহনে (৩ নম্বর বাস) আগে শাহবাগ থেকে মহাখালী যেতে ছয় টাকা ভাড়া দিতে হতো। তবে নতুন ভাড়া কার্যকরের দিন থেকে যাত্রীদের কাছ থেকে ৮/১০ টাকা করে আদায় করছে তারা।
কিলোমিটার প্রতি ভাড়া বাড়ার বিষয়ে অনেক আগে থেকে ঘোষণা দেওয়া হলেও ভাড়া কার্যকরের দ্বিতীয় দিনেও দূরত্ব অনুযায়ী বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিএ) নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা হাতে পাননি বলে অভিযোগ করেন অনেক বাস চালক।
খিলগাঁও থেকে মোহাম্মদপুরে চলাচলকারী মিডওয়ে পরিবহনের একাধিক বাসের কর্মী জানান, মালিকপক্ষ তাদের এখনও নতুন নিয়মে বেশি ভাড়া আদায়ের নির্দেশ দেয়নি। ২/১ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
নিউ ভিশন পরিবহন তাদের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা করেছে। মতিঝিল থেকে ফার্মগেইট পর্যন্ত দূরত্ব ১২ টাকা করে নিচ্ছে তারা। তবে মতিঝিল থেকে শাহবাগ হয়ে ফার্মগেইট যেতে মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়।
বিকল্প পরিবহনের সুপারভাইজার লিটন বলেন, নটরডেম কলেজ থেকে মিরপুর-১২ পর্যন্ত তারা আগে ২৪ টাকা ভাড়া নিতেন। এখন নতুন করে ২৮ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করলেও তা আদায় করা হচ্ছে না। যাত্রীদের কাছ থেকে ২৫ টাকাই নেওয়া হচ্ছে।
বিআরটিএর হিসাবে এই পরিমাণ দূরত্বে ২৯ টাকা ভাড়া আসে বলেও দাবি করেন লিটন।
সরকার নামে মাত্র ভাড়া বাড়ালেও বাস কোম্পানিগুলো এই সুযোগে সুবিধা মতো ভাড়া বাড়িয়ে নিচ্ছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে অভিযোগ করেন গুলিস্তানে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত আবুল কালাম।
গ্যাসের দাম এবং ভাড়া কোনোটি বাড়ানোই ‘ঠিক হয়নি’ মন্তব্য করেন তিনি বলেন, “হঠাৎ করে কি এমন হয়ে গেল যে গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে? আর গ্যাসের দাম মাত্র ৪/৫ টাকা বাড়লে বাসের ভাড়াই বা কেন পরিবর্তন করতে হবে?”
বিভিন্ন বাস কোম্পানির অনেক কর্মকর্তাও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি ও বাসের ভাড়া বাড়ানো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
শিখর পরিবহনের পরিচালক মাহমুদ হোসেন ‘ব্যক্তিগতভাবে ভাড়া তালিকা নড়চড়ের পক্ষে নন’ মন্তব্য করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২/১ টাকা ভাড়া বাড়াতে গিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ড হয়; অনেক সময় গাড়িতে ভাংচুর হয়। তাই খুব বেশি প্রয়োজন না পড়লে ভাড়া পরিবর্তন না করাই ভলো।”
“সরকার যেখানে শক্ত অর্থনীতির ওপর দাঁড়াচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে, সেই মুহূর্তে দেশীয় খনি থেকে পাওয়া গ্যাসের দাম বাড়ানোর কি প্রয়োজন ছিল? বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমেছে কিন্তু দেশীয় বাজারে তাও কমানো হয়নি। বাসের ভাড়া আগে যা ছিল তা থাকলেই বা কি অসুবিধা হতো। ”
শিখর ছাড়াও আগারগাঁও থেকে আব্দুল্লাহপুরগামী জাবালে নূর এবং মিরপুর আনসার ক্যাম্প থেকে বাড্ডার নতুন বাজার পর্যন্ত চলাচল করা আকিক পরিবহনের অন্যতম পরিচালকের পদে আছেন মাহমুদ হোসেন।
জাবালে নূরের ভাড়া ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৭ টাকা করা হলেও আকিক পরিবহনের আগের নিয়ে ২৫ টাকা ভাড়াই ঠিক রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পর গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকায় সিএনজিচালিত বাস, মিনিবাস ও অটোরিকশার ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করে দেয় সরকার। সিএনজিচালিত অটোরিকশার নতুন ভাড়া ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন