বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের সিমের নিবন্ধন নিশ্চিত করার কাজের শুরুতেই অসংখ্য ভুয়া সিম ধড়া পড়ার পর বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ অবস্থার জন্যে দায়ী মোবাইল অপারেটর ও সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
তবে অপারেটররা বলছেন জাতীয় পরিচয়পত্র সার্ভারে এতদিন তাদের প্রবেশাধিকার ছিলনা বলেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।সরকারের প্রতিমন্ত্রী বলছেন এ পর্যন্ত এক কোটির মতো সিমের তথ্য যাচাই করা হয়েছে তার মধ্যে ৭৫ লাখই যথাযথ নিবন্ধিত হয়নি।
মোবাইল ফোনের সিমের তথ্য যাচাইয়ের কাজ শুরু হওয়ার পর মোবাইল অপারেটররা এ পর্যন্ত এক কোটি সিমের তথ্য দিয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র কর্তৃপক্ষের কাছে।
যাচাইয়ে দেখা গেছে মাত্র সাড়ে ২৩ লাখের মতো সিম সঠিক ভাবে নিবন্ধিত হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলছেন তথ্য যাচাইয়ের চলমান কাজে তারা ভয়াবহ অনিয়মের চিত্র খুঁজে পেয়েছে।
তিনি বলেন, “একটা পরিচয়পত্রের বিপরীতে ১৪ হাজার ১১৭টি সিম দেয়া হয়েছে। এটি একটি কোম্পানি নয় বরং সবগুলো কোম্পানির সিম আছে একই পরিচয়পত্রের বিপরীতে। একটি ভুয়া পরিচয়পত্রের বিপরীতে অনেক সিম আছে। আবার অনেকগুলোতে দেখা গেছে পরিচয়পত্রই ভুয়া।”
কিন্তু এ পরিস্থিতির জন্যে দায়ী কে? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ টেলিফোন শিল্প সংস্থার উপদেষ্টা মোস্তফা জব্বার বলেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসির ব্যর্থতা এবং মোবাইল অপারেটরদের উদাসীনতাই এর জন্যে দায়ী।
তিনি বলেন, “বিটিআরসি এ পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থার একটি দৃষ্টান্তও দেখাতে পারেনি। সে কারণে অপারেটররা সীমাহীন নির্লজ্জের মতো কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে এ কাজ গুলো করেছে।”
তবে অপারেটররা বলছেন সিম নেয়ার সময় গ্রাহকরা পরিচয়পত্রের যে কপি দিয়েছেন এতদিন সেটি সংরক্ষণ বা তার উপর নির্ভর করা ছাড়া তাদের আর কিছু করার ছিলনা। গ্রামীণ ফোনের কোম্পানি সেক্রেটারি ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেইন সাদাত বলছেন এখন পরিচয়পত্র যাচাইয়ের সুযোগের মাধ্যমে এ সমস্যার অবসান হবে।
তিনি বলেন, “আমাদের হাতে পরিচয়পত্রের একটা হার্ড কপি দেয়া হতো। সেটা দিয়ে বোঝার কোন উপায় ছিলনা যে ভুয়া কি-না । এখন পুনঃ নিবন্ধনের পর সে সমস্যা আর থাকবেনা।”
আমাদের হাতে পরিচয়পত্রের একটা হার্ড কপি দেয়া হতো। সেটা দিয়ে বোঝার কোন উপায় ছিলনা যে ভুয়া কি-না । এখন পুনঃ নিবন্ধনের পর সে সমস্যা আর থাকবেনা।
গ্রামীণ ফোনের এ কর্মকর্তা বলছেন তারা অনেক আগেই তারা পরিচয়পত্র যাচাই বাছাইয়ের সুযোগ চেয়েও পাননি। তবে মোস্তফা জব্বার বলছেন অনেকগুলো অপারেটর এ ধরনের সুযোগই চাননি।
তিনি বলেন, “মাত্র দুটি কোম্পানি ছাড়া আর কেউ এ সুযোগই চায়নি। তাহলে সুযোগ পাবে কিভাবে? ১৩ কোটি সিম বিক্রি করে তার মধ্যে এক কোটির বেশি ডাটা নেই, এটা কি কোন দেশে সম্ভব?"
ওদিকে অপরাধ মূলক কাজে মোবাইল ফোনের ব্যবহার ঠেকাতে ১৬ ডিসেম্বর থেকেই সিম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক বা আঙ্গুলের ছাপ পদ্ধতি চালু হবে। এর মধ্যেই সব সিমের তথ্য যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন করার আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
অপারেটররা বলছেন তারাও আশা করছেন এ সময়ের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে বড় ধরনের অগ্রগতি হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন