শুক্রবার, ২০ মে, ২০১৬

এগিয়ে আসছে রোয়ানু, চট্টগ্রামে বিপদ সংকেত

Image copyrightBANGLADESH METEOROLOGICAL DEPARTMENT
Image captionঘূর্ণিঝড়টি আরো শক্তিশালী হয়ে উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে খানিকটা এগিয়ে এসেছে
বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু আরো শক্তিশালী হয়ে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে খানিকটা এগিয়ে আসায় চট্টগ্রাম ও আশেপাশের জেলাগুলোয় সাত নম্বর বিপদ সংকেত জারি করেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মংলায় পাঁচ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে।
আগামীকাল বিকাল নাগাদ ঝড়টি উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি আরো শক্তিশালী হয়ে উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে আসছে। ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার।
শুক্রবার দুপুর থেকেই উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হতে শুরু করে। অনেক স্থানে সেই সঙ্গে ছিল ঝড়ো বাতাস।
সাত নম্বর বিপদ সংকেত জারির পর উপকূলীয় জেলাগুলোয় ঝড় মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, উপকূলীয় জেলাগুলোয় নয়শয়ের বেশি সাইক্লোন সেন্টারে মানুষজনকে সরিয়ে আনার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেসবাহউদ্দিন বলছেন, ''ঝড়টি মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসাবে আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছি। উপকূলীয় এলাকাগুলোয় সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা নিজেরা মাঠে মাঠে ঘুরে সবাইকে সাইক্লোন সেন্টারে যাওয়ার বিষয়াদি তদারকি করছেন। পর্যাপ্ত ত্রাণও মজুদ করা হয়েছে।''
বেসরকারি সংস্থাগুলো এবং স্বেচ্ছাসেবীদেরও এ কাজে সহায়তা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
একই ধরণের প্রস্তুতির খবর পাওয়া গেছে কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী সহ অন্য উপকূলীয় জেলাগুলো থেকেও।
Image copyrightBANGLADESH METEOROLOGICAL DEPARTMENT
Image captionঝড়টি যেভাবে এগিয়ে আসছে, তাতে শনিবার বিকাল বা সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে
বিকাল থেকেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে নৌচলাচল কর্তৃপক্ষ। ঝড়টি এখনো বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এবং এদিকেই এগিয়ে আসছে।
ঝড়ের প্রভাবে এর মধ্যেই শ্রীলংকা এবং ভারতের ওড়িশাসহ পূর্ব উপকূলে ঝড়ো বৃষ্টি হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশের ভোলার প্রত্যন্ত একটি উপকূলীয় থানা, লালমোহনের একজন বাসিন্দা মোঃ. ইউসুফ বলছেন, ''দুপুর থেকেই ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা খাবার দাবার সংগ্রহ করে নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার প্রস্তুতি নিলেও, এখনো যেতে শুরু করেননি। হয়তো ঝড়ের মাত্রা আরো বাড়লে তারা সেখানে চলে যাবেন।''
কুতুবদিয়া দ্বীপের একজন বাসিন্দা আলাউদ্দিন আল আজাদ জানিয়েছেন, তাদের এলাকার আবহাওয়া অনেকটাই গুমোট হয়ে আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য সতর্ক হয়ে আছেন। ঝড় আরো বাড়লে তারা নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
সাত নম্বর সংকেতের পরই সাধারণত মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়ে থাকে। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, আগামীকাল বিকাল বা সন্ধ্যা নাগাদ ঝড়টি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঝড়টি কতটা শক্তিশালী হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে?
আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন বলছেন, ''সাইক্লোনিক ঝড়ের যে গতি থাকে, এটাও সেরকম গতিতেই আসবে। হয়তো এটা মাঝারি ধরণের ঘূর্ণিঝড় হবে। এটির ঝড়ো আকারের বাতাসের গতিবেগ হবে ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। উপকূলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।''
বাংলাদেশে প্রতিবছর ছোটখাটো মাত্রার ঝড় হলেও, সর্বশেষ বড় আকারের ঘূর্ণিঝড়, সিডরের শিকার হয়েছিল ২০০৭ সালের নভেম্বরে। সেই ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিল দুহাজারের বেশি মানুষ। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা বলছেন, এবারো ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সবরকম প্রস্তুতিই তারা নিচ্ছেন।