রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

বৃক্ষমানব আবুল বাজানদারের অপারেশন করা হলো যেভাবে

Image copyrightGetty
Image captionমায়ের সঙ্গে 'বৃক্ষমানব' আবুল বাজানদার
বাংলাদেশে বৃক্ষমানব বলে পরিচিত আবুল বাজানদারের ডান হাতে আজ অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে এ অপারেশনের পর চিকিৎসকরা বলছেন হাতের আঙ্গুল থেকে গাছের শিকড়ের মতো যা হয়েছিলো সেগুলো সফলভাবে অপসারণ সম্ভব হয়েছে।
গত দশ বছর ধরে বিরল ‘ট্রি ম্যান সিনড্রোম’ রোগে ভুগছিলেন আবুল বাজানদার।
গত মাসের শেষ দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে আনার পর নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে আজই প্রথম অস্ত্রোপচার করা হলো তার।
সাড়ে তিন ঘণ্টার এ অপারেশনের বর্ণনা দিয়ে অপারেশন টীমের একজন সদস্য অধ্যাপক কবীর চৌধুরী বলেন এক ধরনের ইলেকট্রিক মেশিনে আঙ্গুলের বাড়তি অংশগুলো কেটে ফেলা হয়েছে যাতে করে রক্তপাত বেশি না হয়।
এছাড়া চামড়ার পুনর্গঠন যাতে হয় আর ইনফেকশন যাতে না হয় সেজন্য বিশেষ ধরনের স্প্রে করা হয়েছে।
মিস্টার বাজানদের অপারেশন টীমের নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক আবুল কালাম।
তিনি এ অস্ত্রোপচারের মূল লক্ষ্য ছিলো মিস্টার বাজানদারের হাতের আঙ্গুলগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোকে দৃশ্যমান ও স্বাভাবিক করার সুযোগ তৈরি করা।
তিনি বলেন অনেকগুলা পর্যায়ে সার্জারি চলবে এবং শেষ পর্যন্ত কম অপারেশনেই হাত স্বাভাবিক করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি জানান শুরুতে দু আঙ্গুলে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েও অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে সবগুলো আঙ্গুলেই অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন তারা। আর এ জন্য শুধু ডান হাতকেই অবশ করা হয়েছিলো।
তিনি বলেন অপারেশনটি তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সফল হয়েছে।
কিন্তু অপারেশনের মাধ্যমে মিস্টার বাজানদারের হাত ও পা পুরোপুরি মুক্ত করা সম্ভব হলেও রোগটি আবার কি ফিরে আসতে পারে তার শরীরে ?
এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আবুল কালাম বলেন এ বিষয়টি পরীক্ষার জন্যেই ডিএনএ ম্যাপিংয়ের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে।
ওদিকে অপারেশন শেষ হওয়ার পর মিস্টার বাজানদারের বাবা মা ও স্ত্রীকে নেয়া হয় তার কাছে।
সন্তানকে দেখে এসে মা আমেনা বেগম বলেন তার ছেলে ভালো আছে এবং তার সাথেও কথা বলেছে।
তার স্ত্রী হালিমা খাতুন বলেন তার খুব ভালো লাগছে কারণ দশ বছর পর রোগ থেকে মুক্তি পাবে এবং আবার আগের মতো হবে।
আবুল বাজানদারের অস্ত্রোপচার টীমের সদস্য অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন বলেন আবুল বাজানদারের চিকিৎসা বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং চিকিৎসকদের জন্যে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
আর এ চ্যালেঞ্জের প্রথম ধাপে তারা সফল হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
চিকিৎসকেরা আরও বলছেন এখন পর্যন্ত পরীক্ষা নিরীক্ষায় মিস্টার বাজানদারের শরীরে ক্যান্সারের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, সেটিও স্বস্তি এনে দিয়েছে তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন