বাংলাদেশের মসজিদগুলোকে যেন রাজনৈতিক প্রচারণার কাজে ব্যবহার করা না যায়, সেজন্যে নতুন এক উদ্যোগ নিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
কর্মকর্তারা বলছেন, কোন কোন মসজিদে জুম্মার নামাজের খুতবার সময় বাংলা বক্তব্যে এমন অনেক রাজনৈতিক বিষয়ের অবতারণা করা হয় যা পরোক্ষভাবে জঙ্গি কার্যক্রমকে উস্কে দিতে পারে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, এটি বন্ধ করতে এবং খুতবায় আরবিতে দেয়া বক্তব্যের সঙ্গে যেন বাংলায় দেয়া বক্তব্যের মিল থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে তারা সামনের মাস থেকে ইমামদের প্রশিক্ষণ দেবেন।
সাধারণত জুম্মার নামাজের সময় খতিবরা প্রথমে বাংলায় বক্তব্য দেন। এ বক্তব্য খানিকটা দীর্ঘ হয়। এরপর আরবিতে কম সময়ে খুৎবা পড়া হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মো: আফজাল বলছেন,বাংলা বক্তব্যের সময় অনেক সময় রাজনৈতিক প্রসঙ্গ টানা হয়।
মি: আফজাল বলেন, “খতিবরা বাংলায় যে ওয়াজ করেন সেখানে যেন তারা আরবি খুৎবার সারমর্মটি বলেন। মসজিদ আল্লাহর ঘর। সেখানে কোরান-হাদিসের পরিপন্থী অথবা কোন রাজনৈতিক দলের কথাবার্তা মসজিদে যেন ওনারা না করেন।”
সেজন্য খতিবদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানালেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক। এজন্য এরই মধ্যে একটি খতিব কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে।
খুৎবা যেন আরবিতে দেয়া হয় সেজন্য আগামী মাস থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
মি: আফজাল বলেন , “আমাদের দেশের হাজার বছরের রীতি খুৎবা আরবিতে দিতে হবে। এটাই আমরা মনে করি উত্তম। খুৎবাতে কোরানের আয়াত থাকে, হাদিসের আয়াত থাকে। এবং কোরান হাদিসের আলোকেই সামাজিক সমস্যাগুলো তুলে ধরে।”
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় তিন লক্ষ মসজিদ আছে। সব মসজিদের খতিব এবং ইমামদের চিন্তা এবং দৃষ্টিভঙ্গি একরকম নয়। ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
ঢাকার একটি মসজিদের ইমাম মুফতি তানঈম হাসান মাহমুদী বলেন, তিনি আরবি খুৎবার সাথে বাংলা বক্তব্যের সামঞ্জস্য রেখে সেটিকে উপস্থাপন করেন।
মি: মাহমুদী বলেন,“আমরা বাংলা যে বয়ানটা করি সেটাকে হুবহু আরবি খুৎবায় বলি। হাদিসের রেফারেন্স ছাড়া কোন কথা হয়না।”
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলা খুৎবায় বাড়তি কিছু বলা হয় না।
মি: মাহমুদী বলেন, “ যেহেতু বাংলায় সময় একটু বেশি সেজন্য বুঝিয়ে বলার জন্য বিভিন্ন উদাহরণ আসে। কিন্তু এর মূল কথাটা আরবির মধ্যে চলে আসে। ”
খতিবরা যাতে জঙ্গি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায় সেজন্য সরকারের তরফ থেকে তাদের আহবান করা হয়েছে।
দেশের মসজিদগুলোতে ইমাম এবং খতিবরা কি ধরনের বক্তব্য রাখছেন সে বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
মি: আফজাল বলেন , “ আমি ৬০ হাজার ওলামাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকি। প্রতিটি ইউনিয়নে আমার আট থেকে ১২ জন ইমাম এবং ধর্ম শিক্ষক আছেন। তাদের মাধ্যমে আমার একটা নেটওয়ার্ক আছে।”
এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তিনি দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মসজিদগুলো সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখেন বলে উল্লেখ করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন